Friday 28 April 2017

কে এই কাশেম বিন আবুবকর কেন তাকে নিয়ে পাশ্চাত্য মিডিয়া এত আলোচনা

কে এই কাশেম বিন আবুবকর কেন তাকে নিয়ে পাশ্চাত্য মিডিয়া এত আলোচনা


গতকালকে কাশেম বিন আবুবকরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলির রিপোর্ট ভালো করে খেয়াল করেছেন কেউ? গতকাল এএফপি প্রথমে এই রিপোর্টটা করে। তারপরই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক
মিডিয়া ফলাও করে এএফপি'র রিপোর্টই মোটামুটি কপিপেস্ট করে প্রচার করতে থাকে।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইয়াহু নিউজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্যা স্টার ও মালয়মেইল, পাকিস্তানের দ্য ডন, ফ্রান্সের ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, হাঙ্গেরির হাঙ্গেরি টুডেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে কাসেমকে নিয়ে ওই প্রতিবেদন ছেপেছে। আজকে আবার প্রথম আলোর দুই নম্বর পৃষ্টায় এএফপি'র বরাত দিয়ে কাশেমের খবর ছাপা হয়েছে।

কিন্তু কেন?

আন্তর্জাতিক মিডিয়া তার মত একটা রাইটারকে নিয়ে এত আগ্রহ দেখাবে কেন? এটা বুঝতে হলে প্রতিবেদনটতে একটু নজর দেয়া উচিত।

পাশ্চাত্য এমন একটা ইসলাম চায় যেখানে জাহিলিয়াতের সব কিছু থাকবে আবার ইসলামও থাকবে। আপনি পুরাপুরি শয়তানের এবাদত করার পরেও মুসলিম থাকবেন। যেমন খ্রিস্টান ধর্মে মদ খাওয়া হারাম হইলেও তারা মদ খায় এবং এতে তাদের ক্রিশ্চিয়ানিটিতে কোন সমস্যা হয় না। এটাই মূলত সাংস্কৃতিক পরিসরে প্র‍্যাক্টিক্যল সেক্যুলারিজম। পাশ্চাত্য গুরুদেব এবং বিশ্বজুড়ে তাদের দোষররা অনেকটা এটাই কায়েম করতে চায় । এটা এমন এক ইসলামের দাওয়াত আপনাকে দেয় যেখানে আপনি জাহিলিয়াতের মজা লুটতে পারবেন, আবার বেহেশতেও যেতে পারবেন।

ইসলামে বিবাহ-বহির্ভূত প্রেম নিষিদ্ধ। এখন আমাদের কাশেম ভাই যখন "বিবাহবহির্ভূত ইসলামী প্রেম" টাইপের কিছু একটা হাজির করার চেষ্টা করেন এবং মোটামুটি ইসলামী মূল্যবোধ লালনকারী এক শ্রেণীর ইয়াংস্টার সেটাকে লুফে নেয় তখন ওনারা এটাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন, এবং একটা সেক্যুলার ইসলামের সাংস্কৃতিক প্রারম্ভের ভূমিকায় একটা আশার আলো হয়ত দেখতে পান।

প্রেমও চলবে ধর্মও চলবে এটাই তাদের কাছে মডারেট ইসলাম। এএফপি কিভাবে লিখেছে দেখেনঃ
"Now his work is undergoing something of a renaissance as Bangladesh slides from the moderate Islam worshipped for generations to a more conservative interpretation of the scriptures."
(প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুসৃত মডারেট ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে এখন বাংলাদেশ যখন ধর্মীয় গ্রন্থের রক্ষণশীল ব্যাখ্যার দিকে ঝুঁকছে তখন কাশেম বিন আবু বকরের উপন্যাস অনেকটা বিপ্লব (রেঁনেসা) ঘটিয়ে চলেছে।)

কি দারুণ একটা খেলা হিজাবও থাকবে, মসজিদও থাকবে আবার বিবাহবহির্ভূত প্রেমও থাকবে ।
"Since his breakthrough, Abubakar has written dozens of works, most revolving around the mosque, veiled women and wayward youth abandoning so-called corrupt lifestyles after finding religion."

এই ধরণের প্রেম যে কী অসাধারণ জিনিস এবং কতটা উপভোগ্য তা কাশেম সাহেবের নিজের বয়ানে উঠে এসেছেঃ
"Girls write me love letters with ink dipped in their own blood. Some were desperate to marry me"
( মেয়েরা তাদের নিজেদের রক্ত দিয়ে আমার কাছে চিঠি লেখে এবং কেউ কেউ ত আমাকে বিয়ে করার জন্য একদম পাগল ছিলো।)

সাহিত্যের মান বিচারে এবং পাঠক জনপ্রিয়তায়, এবং কোন শ্রেণীর পাঠকের কাছে তিনি জনপ্রিয় সেগুলি অবশ্য ভিন্ন আলোচনা । যারা তার লেখা পড়ে নাক সিটকায় তাদের নাক সিটকানোতে কোন সমস্যা নাই। এবং যারা এটাকে ভালোভাবে নেন তারা নেবেন। আমার আতরের গন্ধ ভালো লাগে না, মাথা ধরে যায়। এই কারণে যারা আতর ব্যাবহার করেন তারা খারাপ রুচির বা ভালো রুচির হয়ে যান না । কিম্বা আমার রুচি সুনিশ্চিতভাবে খারাপ তা বলা যায় না। রুচি খারাপ না ভালো তা ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার, ব্যক্তি নিজেই তা নির্ধারণ করে। এটা পাঠক কাশেম বিন আবু বকরকে তার মত করে বিচার করুক, তাতে আমার সমস্যা নাই। কিন্তু তিনি যে বিষয়টাকে উপজীব্য করে তার উপন্যাসের প্লট নির্মান করেন অর্থাৎ "বিবাহবহির্ভূত ইসলামী প্রেম" - এই বিষয়ের সাথে ইসলামের অবশ্যই কাটাকাটি আছে।

তবে এই ধরণের লেখাজোখার একটা সাংস্কৃতিক ইমপ্যাক্ট আছে, এবং থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে কাশেম সাহেব যেই ধরণের ইম্প্রেশন তৈরী করছেন তার ইফেক্ট হুমায়ূন আহমেদের হিমুর মত নয়। আপনি হিমুর সাথে ইসলাম রিলেট করেন না কিন্তু কাশেম সাহেব যে ধরণের চরিত্র উপস্থাপন করেন তার সাথে ইসলামের একটা ডিসটর্টেড ভার্শন হাজির করেন যেটা ইসলামের সাথে যায় না।

 এ কারণেই বোধহয় আমাদের মসজিদে তারাবী পড়াতে আসা এক হুজুর কাশেম সাহেবের বই লুকিয়ে পড়তেন এবং যতদূর বুঝি "বোরকা পরা সেই মেয়েটি" না হলেও কোন এক মেয়ের সাথে তার প্রেম ছিলো । তিনি কওমী মাদ্রাসায় পড়তেন। খুব ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে জানতে পারতাম তিনি দিনের বেলা হলে গিয়ে মুভি দেখতেন। সেসব গল্পও হত। রাতে তারাবীহ পড়াতেন। তার সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াতে পেছনের মুসল্লিগণ ঠুকরে কেঁদে উঠতেন। তারাবীতে লোক কাঁদানোর এই বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড জেনে তার বোরকা পরা প্রেমিকার হৃদয়ে কোন বাড়তি পবিত্রতার সৃষ্টি হত কি না, কিম্বা তার চোখ ভিজে উঠতো কিনা - সেখবর আমার জানার কথা না।

এএফপি আমাদের জানাচ্ছে,
"And yet his tales of lovers whispering sweet nothings between calls to prayer sold millions in the 1980s and proved a huge hit among young girls from Bangladesh's rural, conservative heartland."
(আজানের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকাদের sweet nothings তথা লুতুপুতু সংলাপের গল্প চরম রক্ষণশীল গ্রাম্য এলাকার যুবতী মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং আশির দশকে লক্ষলক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে।)

তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করতেই পারেন। এবং তিনি সেখাবে ধর্মকে উপজীব্য করতেই পারেন। এতে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু এর ভেতর দিয়েই যারা ধর্মের একটা নতুন রূপ আবিষ্কার করতে চান তারা বিভ্রান্ত বটে।
Copy

No comments:

Post a Comment